Effect of mobile and tablet on child brain-৭টি ভয়াবহ ও আশাব্যঞ্জক সত্য: প্রযু‌ক্তি (মোবাইল/ট্যাব) কীভাবে শিশুর মস্তিষ্ককে গঠন কিংবা ধ্বংস করছে?

You are currently viewing Effect of mobile and tablet on child brain-৭টি ভয়াবহ ও আশাব্যঞ্জক সত্য: প্রযু‌ক্তি (মোবাইল/ট্যাব) কীভাবে শিশুর মস্তিষ্ককে গঠন কিংবা ধ্বংস করছে?
Effect of mobile and tablet on child brain

Effect of mobile and tablet on child brain-৭টি ভয়াবহ ও আশাব্যঞ্জক সত্য: প্রযু‌ক্তি (মোবাইল/ট্যাব) কীভাবে শিশুর মস্তিষ্ককে গঠন কিংবা ধ্বংস করছে?

প্রযু‌ক্তির উথান: এখনকার শিশুদের বাস্তবতা।(Effect of mobile and tablet on child brain).

বর্তমান যুগে “Effect of mobile and tablet on child brain” বিষয়টি একটি অন্যতম আলোচিত ইস্যু হয়ে উঠেছে। একসময় যেখানে খেলাধুলা, গল্প আর কল্পনা ছিল শিশুর বিকাশের সহায়ক, এখন সেখানে জায়গা নিয়েছে মোবাইল ও ট্যাবের স্ক্রিন। শিশুরা এখন ডিভাইস-নির্ভর হচ্ছে এমনভাবে, যা তাদের মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশকে গভীরভাবে প্রভাবিত করছে।

শুধু স্কুলগামী শিশুই নয়, ১-২ বছর বয়সেই অনেক শিশুর হাতে মোবাইল বা ট্যাব তুলে দেওয়া হচ্ছে। অভিভাবকেরা হয়তো সাময়িক শান্তি পাচ্ছেন, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এর ভয়াবহ ফলাফল পরিলক্ষিত হচ্ছে শিশুর আচরণ, আবেগ, বুদ্ধিমত্তা এবং একাগ্রতার ঘাটতিতে।

“Digital Overload”: শিশুদের মস্তিষ্কে বিপজ্জনক চাপ। (Effect of mobile and tablet on child brain).

“Effect of mobile and tablet on child brain” সবচেয়ে মারাত্মকভাবে দেখা যায় যেটি তা হলো—Digital Overload। শিশুদের মস্তিষ্ক এখন টানা রঙিন স্ক্রিনের আকর্ষণ, দ্রুত পরিবর্তিত দৃশ্য, শব্দ এবং অ্যানিমেশনের মধ্যে নিমজ্জিত থাকে। ফলস্বরূপ, তারা বাস্তব জগতের প্রতি আগ্রহ হারায়।

এই অনবরত উদ্দীপনা শিশুর স্নায়ুতন্ত্রকে অতিরিক্ত উত্তেজিত করে। যার ফলে জন্ম নেয়:

স্থায়ী মনোযোগহীনতা

আবেগ নিয়ন্ত্রণে সমস্যা

অতিরিক্ত জেদ বা উদ্বেগ

শারীরিক কার্যকলাপে অনীহা

গবেষণায় প্রমাণিত, দীর্ঘসময় মোবাইল/ট্যাব ব্যবহারে শিশুর প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্সের কার্যক্রম প্রভাবিত হয়, যা সিদ্ধান্ত গ্রহণ, আবেগ নিয়ন্ত্রণ এবং সামাজিক আচরণের জন্য প্রয়োজনীয়।

একাগ্রতা হ্রাস: মনোযোগের শক্তি কেড়ে নিচ্ছে প্রযুক্তি। (Effect of mobile and tablet on child brain).

শিশুর শিক্ষাজীবনের ভিত্তি গড়ে ওঠে তার একাগ্রতা বা মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতার ওপর। ছোটবেলা থেকেই যদি একটি শিশু নিজের মনকে কোনো কাজে স্থির করে রাখতে না পারে, তবে তার শেখার প্রক্রিয়া, বোঝার ক্ষমতা ও মেধার বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়।

বর্তমানে মোবাইল ও ট্যাব শিশুর একাগ্রতা নষ্ট করার একটি বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিশুরা যখন স্ক্রিনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটায়, তখন তারা খুব দ্রুত বিভিন্ন চিত্র, শব্দ ও গল্পের মধ্য দিয়ে যায়। এতে করে তারা কিছু বুঝে ওঠার আগেই পরবর্তী কনটেন্টে চলে যায়। এই দ্রুত পরিবর্তনের অভ্যাস শিশুদের মনকে চঞ্চল করে তোলে এবং কোনো একটি বিষয়ের ওপর মনোযোগ ধরে রাখা তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

ফলস্বরূপ, শিশুরা যখন পড়াশোনার জন্য বসে, তখন তাদের মন অন্য কিছুতে চলে যায়। তারা সহজে বিরক্ত হয়ে পড়ে, দীর্ঘ সময় এক জায়গায় মনোযোগ ধরে রাখতে পারে না। গল্প শোনা, শেখা, ধৈর্য ধরে কোনো কাজ করা—এসব প্রয়োজনীয় সামাজিক ও শিক্ষাগত দক্ষতা তৈরি হয় না। এটি শিশুর একাডেমিক ফলাফলকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং স্কুলে পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা বাড়ায়।

যখন শিশু দেখে, তার চেয়ে ছোট বা বড় বন্ধুরা ভালো করছে অথচ সে পারছে না, তখন তার আত্মবিশ্বাসে ধাক্কা লাগে। সে নিজেকে ছোট ভাবতে শুরু করে। এভাবে সে ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে এবং ভয়, দ্বিধা, হতাশা তার মধ্যে বাসা বাঁধে।

সবশেষে বলা যায়, প্রযুক্তির অসতর্ক ব্যবহারের ফলে শিশুর মনোযোগ ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর এই মনোযোগের অভাব একদিকে যেমন শিক্ষাজীবনে বাধা সৃষ্টি করে, অন্যদিকে মানসিক বিকাশেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই অভিভাবক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব, শিশুদের প্রযুক্তি ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনা এবং তাদের এমন অভিজ্ঞতা দেওয়া যা একাগ্রতা, ধৈর্য ও মেধা বিকাশে সহায়ক হয়।

ভাষা ও আবেগ বিকাশে ব্যাঘাত: শিশু হয়ে পড়ে নির্লিপ্তড়। (Effect of mobile and tablet on child brain).

শিশুদের সঠিক মানসিক ও সামাজিক বিকাশের জন্য প্রথম কয়েকটি বছর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়েই তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে ভাষা শেখার ক্ষমতা, আবেগ প্রকাশের উপায়, এবং অন্যের অনুভূতির প্রতি সংবেদনশীলতা বা সহানুভূতির মতো সামাজিক দক্ষতা। কিন্তু যখন একটি শিশু তার সময়ের বড় অংশ মোবাইল বা ট্যাবের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে কাটায়, তখন এই স্বাভাবিক বিকাশে বড় ধরনের ব্যাঘাত ঘটে।

Effect of mobile and tablet on child brain বিষয়ক বিভিন্ন গবেষণা দেখিয়েছে, স্ক্রিন-নির্ভর শিশুরা বাস্তব জীবনের সঙ্গে কম যুক্ত থাকে। তারা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে কথা বলে না, অভিব্যক্তি পর্যবেক্ষণ করে না, কিংবা অন্য কারও অনুভূতির প্রতি প্রতিক্রিয়া জানায় না। এর ফলে তাদের আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা বা Emotional Intelligence (EI) সঠিকভাবে গড়ে ওঠে না।

স্ক্রিনে যে কনটেন্ট তারা দেখে, তা একতরফা এবং যান্ত্রিক। এতে করে শিশুরা শিখতে পারে না কীভাবে কারও মুখের অভিব্যক্তি বুঝতে হয়, কেমন টোনে কথা বললে অন্যের মনোবেদনা বোঝা যায়, কিংবা কখন হাসা আর কখন চুপ থাকা দরকার। অন্যদিকে, বাস্তব সামাজিক মিথস্ক্রিয়ায় এই বিষয়গুলো স্বাভাবিকভাবে শেখে একজন শিশু—কিন্তু স্ক্রিন আসক্ত শিশু এই শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়।

ভাষাগত দিক থেকেও সমস্যা দেখা দেয়। একজন শিশু ভাষা শেখে চারপাশের মানুষের সঙ্গে কথা বলে, প্রতিক্রিয়া পেয়ে। কিন্তু মোবাইল বা ট্যাব শুধুমাত্র ‘দেখায়’ ও ‘শোনায়’, কথা বলার জন্য অনুপ্রেরণা দেয় না। ফলে শিশুর মধ্যে কথার দেরি, শব্দ উচ্চারণে সমস্যা, বাক্য গঠনে দুর্বলতা কিংবা শব্দভাণ্ডারের সীমাবদ্ধতা দেখা যায়। অনেক শিশুর তো তিন বছর বয়স পেরিয়েও স্বাভাবিকভাবে কথা বলা শুরু হয় না।

এছাড়া, গবেষণায় এমনও দেখা গেছে, মোবাইল/ট্যাব-নির্ভর শিশুরা সহজেই রাগে ফেটে পড়ে, কারণ তারা বাস্তব জীবনে আবেগ কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, তা শেখে না। অভিভাবকের সঙ্গে কথা না বলার কারণে তাদের মনে জমে থাকে হতাশা, উদ্বেগ ও অস্পষ্ট অনুভূতি, যা প্রকাশের ভাষা তারা খুঁজে পায় না।

সব মিলিয়ে Effect of mobile and tablet on child brain এই ক্ষেত্রে শিশুকে ভাষাগত দিক থেকে পিছিয়ে দেয় এবং আবেগীয় বুদ্ধিমত্তার বিকাশকে ব্যাহত করে। শিশুরা হয়ে পড়ে নির্লিপ্ত, সংবেদনশীলতাহীন এবং আত্মমুখী। এই বৈশিষ্ট্যগুলো পরবর্তীতে তাদের মানসিক স্বাস্থ্য, সামাজিক সম্পর্ক ও একাডেমিক জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।


করণীয়:

শিশুর সঙ্গে নিয়মিত চোখে চোখ রেখে কথা বলুন

গল্প বলুন, গান করুন, প্রশ্ন করুন

শিশু কাঁদলে বা হাসলে প্রতিক্রিয়া জানান—তাতে আবেগ বোঝার অভ্যাস তৈরি হয়

মোবাইলের পরিবর্তে শিশুর সৃজনশীল খেলনার ব্যবহার বাড়ান

শিশু যেহেতু অনুকরণ করে শেখে, তাই বড়দের উচিত—স্ক্রিন কম ব্যবহার করা ও মুখোমুখি আলাপচারিতা বাড়ানো।

সৃজনশীলতা ও কল্পনার পতন: ভাবনার বদলে স্ক্রিনে ডুবে থাকা।(Effect of mobile and tablet on child brain).

একটি শিশুর বিকাশের প্রাকৃতিক ধারা হচ্ছে কল্পনা ও সৃজনশীলতার মাধ্যমে শেখা। ছোটবেলায় শিশুরা মাটি দিয়ে রান্না খেলা, ছবি আঁকা, পুতুল বা গাড়ি নিয়ে নাটক তৈরি, গল্প কল্পনা করে বলা—এইসব কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে তারা নিজের চিন্তাশক্তি ও কল্পনার জগত গড়ে তোলে। এই ধরণের অভিজ্ঞতা শিশুর মস্তিষ্কে নতুন সংযোগ তৈরি করে, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বাড়ায় এবং আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলে।

কিন্তু আধুনিক যুগে, মোবাইল ও ট্যাবের অতিরিক্ত ব্যবহার সেই প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। শিশুদের এখন অবসর মানেই ইউটিউব ভিডিও দেখা, কার্টুন দেখা, গেম খেলা। এখানে তারা নিজে কিছু তৈরি করে না—বরং শুধু অন্যের তৈরি কনটেন্ট দেখে। আর এটাই “Effect of mobile and tablet on child brain” সবচেয়ে গভীরভাবে প্রভাব ফেলছে সৃজনশীলতা ও কল্পনাশক্তির ওপর।


কীভাবে শিশুর চিন্তাশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়?

১. নিজের মস্তিষ্ক ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়ে না:

শিশুকে ভিডিওতে যা দেখানো হয়, তা-ই সে দেখে, ভাবতে হয় না।

গল্প বা চরিত্র তৈরি করার বদলে সে শুধু অনুসরণ করে।

২. তরুণ বয়সে ধৈর্যহীনতা জন্মায়:

ভিডিও কনটেন্ট দ্রুত বদলায়, ফলে শিশু দ্রুত সবকিছু পেতে অভ্যস্ত হয়।

দীর্ঘ সময় ধরে কল্পনায় ডুবে থাকার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।

৩. বাস্তব জীবনে অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হলে ভয় পায়:

স্ক্রিনে সবকিছু প্রস্তুত ও সাজানো থাকে।

কিন্তু বাস্তবে সমস্যা সমাধানে যে ধৈর্য, কল্পনা ও চিন্তা দরকার, তা তৈরি না হওয়ায় শিশু দ্রুত ভয় পেয়ে যায় বা আত্মবিশ্বাস হারায়।


এর ফলে কী হয়?

সৃজনশীলতা কমে যায়:
শিশুর ভেতরের চিন্তাশক্তি, নতুন কিছু কল্পনার ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। নিজের মতো কিছু আঁকা, গল্প বানানো বা প্রশ্ন তৈরি করার মানসিকতা হারিয়ে ফেলে।

সমস্যা সমাধানে আগ্রহ হারায়:
যখন কোনো সমস্যা বা বাধা আসে, তখন সে চেষ্টা না করে সাহায্য চায় বা হাল ছেড়ে দেয়। কারণ নিজের চিন্তাশক্তিকে সে কখনো ব্যবহার করেইনি।

বাস্তব পরিস্থিতিতে ভয় পায়:
হঠাৎ কোনো পরিবর্তন বা সামাজিক পরিস্থিতিতে কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে, তা সে বোঝে না। ফলে দ্রুত ভেঙে পড়ে, চুপ হয়ে যায়, অথবা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।


একজন মেধাবী শিশু কীভাবে হয়ে পড়ে নিষ্ক্রিয় ও নির্ভরশীল?

প্রতিটি শিশুর মধ্যেই স্বভাবগত মেধা, কল্পনার শক্তি এবং সৃজনশীলতা থাকে। কিন্তু যদি সেই শক্তিগুলো প্রয়োগের সুযোগ না পায়, তাহলে তা ধীরে ধীরে নিঃশেষ হয়ে যায়। মোবাইল ও ট্যাব শিশুকে সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে।

ফলে সে হয়ে ওঠে নিষ্ক্রিয়—কারণ সে নিজের চিন্তা চালাতে চায় না, সবকিছু তৈরি অবস্থায় পেতে চায়।
এবং হয়ে ওঠে নির্ভরশীল—কোনো কাজেই সে একা উদ্যোগ নিতে পারে না, সবসময় কারও সাহায্য বা নির্দেশনার ওপর নির্ভর করে।


এই সমস্যা থেকে কীভাবে মুক্তি?

শিশুকে মুক্ত সময় দিন—যেখানে সে নিজে কিছু আঁকবে, বানাবে বা ভাববে

খেলা, প্রকৃতি, পুতুল বা রং-তুলি ব্যবহার করতে উৎসাহ দিন

প্রতিদিনের কিছু সময় স্ক্রিনমুক্ত রাখুন

ওর প্রশ্ন শুনুন এবং নিজের মতো উত্তর ভাবতে উৎসাহ দিন।

ঘুমের সমস্যা ও শারীরিক দুর্বলতা।

বর্তমান সময়ে শিশুর হাতে মোবাইল বা ট্যাব থাকা যেন সাধারণ একটি দৃশ্য। কিন্তু এই স্বাভাবিক দৃশ্যের পেছনে রয়েছে এক ভয়ংকর বাস্তবতা। শুধু মানসিক দিক থেকেই নয়, “Effect of mobile and tablet on child brain” বিষয়টি শরীরের ওপরও গভীরভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, বিশেষ করে ঘুম ও শারীরিক স্বাস্থ্য নিয়ে।


প্রযুক্তির কারণে ঘুমের ব্যাঘাত: শিশুর বিশ্রামের সময় লুপ্ত হচ্ছে

ঘুম শিশুদের শরীর ও মস্তিষ্কের পূর্ণ বিকাশে একটি অপরিহার্য উপাদান। শিশুদের ঘুম গভীর ও নিরবচ্ছিন্ন না হলে, তাদের শেখার ক্ষমতা, আবেগ নিয়ন্ত্রণ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং মনোযোগ ধরে রাখার দক্ষতা ব্যাহত হয়। কিন্তু যখন শিশুরা ঘুমানোর আগেও স্ক্রিনে ব্যস্ত থাকে, তখন ঘুম আসতে দেরি হয় বা একেবারেই আসতে চায় না।

এর প্রধান কারণ হলো ‘মেলাটোনিন হরমোনে’ বাধা সৃষ্টি।
মেলাটোনিন আমাদের শরীরের ঘুম-নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন। রাতের সময় শরীর নিজে থেকে এই হরমোন নিঃসরণ করে আমাদের ঘুমের জন্য প্রস্তুত করে। কিন্তু মোবাইল ও ট্যাবের স্ক্রিন থেকে নির্গত নীল আলো (blue light) এই হরমোনের নিঃসরণে বাধা সৃষ্টি করে।

ফলে শিশুরা—

ঘুমাতে দেরি করে

বারবার জেগে উঠে

ঘুম এলেও তা গভীর ও আরামদায়ক হয় না

সকালে ঘুম থেকে উঠতে কষ্ট হয়, ক্লান্তি বোধ করে

এই অনিদ্রা দীর্ঘমেয়াদে শিশুর মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। তারা সারাদিন ঝিমিয়ে থাকে, মনোযোগ দিতে পারে না, খিটখিটে হয়ে ওঠে, এবং সহজেই ক্লান্ত হয়।


অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম: শরীরের ওপর পড়ছে ভারী প্রভাব

“Effect of mobile and tablet on child brain” প্রসঙ্গে শুধু ঘুম নয়—শরীরের অন্য দিকেও পড়ছে এর সরাসরি প্রভাব।

১. ওবেসিটি বা স্থূলতা:
মোবাইল/ট্যাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটানোর মানে হচ্ছে—এক জায়গায় বসে থাকা, নাড়াচাড়া না করা। শরীরের ক্যালোরি পোড়ানো হয় না। তার ওপর অনেক সময় স্ক্রিন দেখার সময় শিশুরা চিপস, চকোলেট, ফাস্ট ফুড খায়, যা দেহে চর্বি জমাতে সাহায্য করে। ফলে শিশুর ওজন বাড়ে এবং স্থূলতা দেখা দেয়।

২. চোখের সমস্যা:
ছোট বয়সেই চোখের রেটিনা স্ক্রিনের আলোয় অতিরিক্ত এক্সপোজড হলে, চোখ শুকিয়ে যাওয়া, ঝাপসা দেখা, মাথাব্যথা, বা দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এছাড়া অনেক সময় শিশুরা চোখ খুব কাছ থেকে স্ক্রিন দেখে, যা চোখের গঠনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

  1. মেরুদণ্ড ও ঘাড়ে ব্যথা:
    শিশু যখন দীর্ঘ সময় একই ভঙ্গিতে মোবাইল বা ট্যাব নিয়ে বসে থাকে, তখন শরীরের স্বাভাবিক অঙ্গবিন্যাস বিঘ্নিত হয়। বিশেষ করে ঘাড় নিচু করে স্ক্রিন দেখলে ‘টেকনেক’ নামে পরিচিত সমস্যা দেখা দেয়, যার ফলে ঘাড়, পিঠ, এবং মেরুদণ্ডে ব্যথা দেখা দেয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে যেতে পারে।

দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব: দুর্বল ভবিষ্যৎ গড়ার আশঙ্কা

যখন একটি শিশু পর্যাপ্ত ঘুম পায় না, তার শরীর সঠিকভাবে বিশ্রাম পায় না এবং কায়িক পরিশ্রমে অংশ নেয় না, তখন তার শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়। শিশুরা সহজে অসুস্থ হয়, ক্লান্ত হয়, মেজাজ খারাপ থাকে এবং স্কুল বা অন্য কাজে পারফর্ম করতে পারে না।

এভাবে “Effect of mobile and tablet on child brain” শিশুদের একদিকে যেমন মানসিকভাবে দুর্বল করে তুলছে, তেমনি তাদের শারীরিক গঠনকেও দুর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে।


করণীয় ও প্রতিকার:

শিশুর ঘুমের ১ ঘণ্টা আগে থেকে মোবাইল/ট্যাব ব্যবহার বন্ধ রাখা উচিত

রাতে ঘর যেন হালকা ও কম আলোয় থাকে, এতে ঘুম সহজে আসে

বিকল্প হিসেবে বই পড়া, গল্প শোনা বা নরম গান চালানো যেতে পারে

প্রতিদিন অন্তত ১ ঘণ্টা শরীরচর্চা বা খেলাধুলা নিশ্চিত করতে হবে

শিশুর ঘাড়, চোখ ও পিঠ ঠিক রাখতে অভিভাবককে সচেতনভাবে নজর দিতে হবে।

মস্তিষ্কের সংযোগ হারায়: সঠিক বিকাশ থেকে বঞ্চিত হয়। (Effect of mobile and tablet on child brain).

শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ একটি বিস্ময়কর প্রক্রিয়া। জন্মের পর থেকে প্রথম পাঁচ বছর হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়, কারণ এ সময়েই শিশুর মস্তিষ্কে সবচেয়ে বেশি এবং দ্রুত নিউরোনাল কানেকশন (neural connections) গড়ে ওঠে। এই সংযোগগুলো যত শক্তিশালী হয়, শিশুর বুদ্ধিমত্তা, আবেগ, আচরণ ও শেখার দক্ষতা তত গভীর ও কার্যকর হয়।

তবে, যখন এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে শিশুরা অধিকাংশ সময় মোবাইল বা ট্যাব নিয়ে কাটায়, তখন Effect of mobile and tablet on child brain ভয়ানক রকমের নেতিবাচক হয়ে ওঠে। তারা শেখার চর্চা না করে স্ক্রিনের সামনে বসে শুধু দেখে, শোনে, এবং গ্রহণ করে—এভাবেই তারা হয়ে ওঠে প্যাসিভ ভোক্তা (Passive Consumer)।


নিউরোনাল সংযোগ কী এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ?

নিউরোন হলো মস্তিষ্কের কোষ যা তথ্য আদান-প্রদান করে।
প্রতিটি নতুন অভিজ্ঞতা, শব্দ, দৃশ্য, স্পর্শ, বা ভাবনার মাধ্যমে শিশুদের মস্তিষ্কে নতুন সংযোগ তৈরি হয়। উদাহরণস্বরূপ—

শিশু যখন বলার চেষ্টা করে

কারও মুখের অভিব্যক্তি বোঝে

খেলাধুলা করে বা নতুন কিছু আবিষ্কার করে

তখন তার মস্তিষ্কে নিউরোনগুলো সক্রিয় হয়ে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এই সংযোগ যত বেশি ও ঘন হয়, শিশুর শেখার শক্তি ততই বাড়ে। এই প্রক্রিয়ায় তৈরি হয় স্মৃতি, বিশ্লেষণ ক্ষমতা, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা, ভাষা বোঝার ও ব্যবহার করার ক্ষমতা।

শিশুর মেধা বিকাশে মায়ের ভূমিকা: অবহেলার ছোট ভুলে বড় বিপদ, জেনে নিন সফলতার 7 টি আশ্চর্যজনক প্রমাণিত কৌশল।


মোবাইল/ট্যাব কীভাবে এই সংযোগে বাধা দেয়?

Effect of mobile and tablet on child brain এই জায়গায় ভয়ংকর প্রভাব ফেলে—

১. একতরফা উদ্দীপনা (One-Way Stimulation):

শিশুরা ভিডিও দেখে, কিন্তু তার প্রতিক্রিয়া জানায় না।

কোনো চিন্তা বা বিশ্লেষণ ছাড়াই শুধু গ্রহণ করে।

২. বাস্তব অভিজ্ঞতার অভাব:

খেলাধুলা, ঘরের কাজ শেখা, বড়দের সঙ্গে কথা বলা—এসব বাস্তব অভিজ্ঞতা যখন অনুপস্থিত থাকে, তখন নিউরোনাল সংযোগ তৈরি হয় না বা দুর্বল হয়।

৩. প্যাসিভ ব্রেইন:

মোবাইল/ট্যাব শুধু মনোরঞ্জনের জন্য ব্যবহৃত হলে, শিশুদের মস্তিষ্ক নিষ্ক্রিয় থেকে যায়।

তাদের মস্তিষ্ক কল্পনা করে না, প্রশ্ন তোলে না, বিশ্লেষণ করে না।

ফলে একসময় দেখা যায়, শিশুর বয়স অনুযায়ী শেখার দক্ষতা কম, কথায় দেরি, আবেগ বোঝায় দুর্বলতা এবং একঘেয়েমি দেখা দেয়।


উদাহরণ দিয়ে বোঝানো যাক

ধরুন একটি শিশু খেলনা গাড়ি নিয়ে নিজে নিজে খেলে, সে নিজেই গাড়িকে রাস্তার মতো চালায়, শব্দ করে, রাস্তা বানায়। এতে—

কল্পনা কাজ করে

চিন্তার সংযোগ তৈরি হয়

স্পর্শ ও গতিশীলতায় অংশ নেয়

বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা শেখে

অন্যদিকে, যদি ওই একই সময় সে মোবাইলে কার্টুনে গাড়ি দেখে, তাহলে শুধু দেখার আনন্দ পায়, কিন্তু কোনো সংযোগ গড়ে ওঠে না।


দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব

শেখার গতি কমে যায়

চিন্তা করার ক্ষমতা দুর্বল হয়

আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না

অন্যদের সঙ্গে সুস্থ যোগাযোগ করতে পারে না

অল্পতেই হতাশ হয়ে পড়ে

এইভাবে Effect of mobile and tablet on child brain শিশুদের ভেতরের সম্ভাবনাকে ধ্বংস করে দেয়, যেটি গড়ে উঠতে পারতো বাস্তব অভিজ্ঞতা, সৃষ্টিশীলতা ও মননশীলতার মধ্য দিয়ে।


করণীয়

শিশুর শেখার জন্য বাস্তব খেলনা, গল্প, সামাজিক যোগাযোগ ও পর্যবেক্ষণের সুযোগ দিন

স্ক্রিন টাইমকে নিয়ন্ত্রণ করুন এবং তদারকি করুন তারা কী দেখছে

মোবাইল/ট্যাব যেন শেখার সহায়ক হয়, বিকল্প নয়

শিশুকে প্রশ্ন করতে উৎসাহিত করুন এবং তার প্রশ্নের গুরুত্ব দিন

ঘরের কাজে বা পারিবারিক আলাপে শিশুদের অংশগ্রহণ করান।

সমাধান: শিশুকে প্রযুক্তি নয়, সম্পর্ক ও অভিজ্ঞতা দিন। (Effect of mobile and tablet on child brain).

Effect of mobile and tablet on child brain রোধে প্রয়োজন শক্তিশালী ও পরিকল্পিত অভিভাবকত্ব। কিছু কার্যকর পদক্ষেপ:

🔹 ১. নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ

প্রতিদিন ৩০ মিনিটের বেশি না—এমন নীতিতে অভ্যস্ত করুন।

🔹 ২. বিকল্প দিন—আবেগ ও সামাজিক দক্ষতা গড়ে তুলুন

গল্প বলা, পুতুল খেলা, ছবি আঁকা, প্রকৃতির সঙ্গে মেলামেশা—এইসব শিশুর মস্তিষ্কে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

🔹 ৩. নিজেরাও স্ক্রিন ব্যবহার কমান

শিশু যা দেখে, তাই শেখে। তাই অভিভাবকের স্ক্রিন ব্যবহারে সতর্কতা জরুরি।

🔹 ৪. “ডিজিটাল ডিটক্স” দিন

সপ্তাহে একদিন পরিবার মিলে স্ক্রিন ছাড়াই সময় কাটানোর উদ্যোগ নিন।

উপসংহার: এখনই সময়—শিশুর ভবিষ্যৎ বাঁচাতে প্রযুক্তি ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনুন (Effect of mobile and tablet on child brain).

প্রযুক্তি আমাদের জীবনের প্রয়োজনীয় অংশ—এ নিয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু “Effect of mobile and tablet on child brain” নিয়ে অবহেলা মানে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেওয়া।

একজন সচেতন অভিভাবক হিসেবে আপনার দায়িত্ব শুধু মোবাইল কিনে দেওয়া নয়, বরং শিশুর আবেগ, আচরণ, বুদ্ধিমত্তা, ও মনোযোগের বিকাশেও বিনিয়োগ করা। আজ আপনি যেমন নিয়ন্ত্রণ আনবেন, আগামী দিনে তার ফল পাবেন একজন আত্মবিশ্বাসী, মেধাবী এবং মানবিক শিশুর মধ্যে।