🍽️শিশু ঠিক মতো খাচ্ছে না?. শিশু ঠিক মতো না খাওয়ার সমস্যা আজকাল প্রায় ঘরে ঘরে …..
শিশুদের খাওয়াদাওয়া নিয়ে মায়েদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। কখনো খাবার খেতে না চাওয়া, কখনো বেছে বেছে খাওয়া, আবার কখনো খাওয়ার সময় কাঁদতে থাকা—এসব যেন এক রুটিন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অভিজ্ঞতাগুলো কি আপনারও?শিশু যদি বারবার খেতে না চায়, মুখ ফিরিয়ে নেয়, প্লেটে খাবার রেখে দেয়, তাহলে তা শুধু খেয়াল করার মতো নয়—এটা হতে পারে ভবিষ্যতের বিপদের সিগন্যাল।কিন্তু জানেন কি, এই সমস্যার পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারে কিছু গভীর শারীরিক ও মানসিক কারণ?মায়েরা সবচেয়ে বেশি ভয় পান সন্তান কিছু না খেলে। একটা অপুষ্ট শিশুর চোখের নিচে কালি পড়ে, শরীর রোগে দুর্বল হয়ে পড়ে, এবং তার শারীরিক ও মানসিক বিকাশ থেমে যেতে শুরু করে।
এমনটা কি হচ্ছে আপনার শিশুর সাথেও? শিশু ঠিক মতো খাচ্ছে না?
আপনি হয়তো বারবার ভাবছেন—
👉 “বাচ্চা কি জেদ করছে, না ওর শরীর খারাপ?”
👉 “জোর করে খাওয়াবো, নাকি অপেক্ষা করবো?”
👉 “ওর কি পেট ভরছে? না কোনও রোগ বাসা বাঁধছে?”
কিন্তু আপনি জানেন কি, শিশুর খাওয়া না চাওয়ার পেছনে শুধু জেদ বা বদভ্যাসই নয়, থাকতে পারে এমন কিছু শারীরিক ও মানসিক কারণ, যা একেবারে অদেখা, অজানা এবং মারাত্মক!

আজকের দিনে অনেক শিশুই খাওয়া নিয়ে সমস্যায় ভুগছে, কিন্তু প্রতিটি মা-বাবা যদি সময়মতো এই লক্ষণগুলো চিহ্নিত না করেন, তবে ভবিষ্যতে এর প্রভাব হতে পারে—
❌ অপুষ্টি
❌ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ঘাটতি
❌ ওজন না বাড়া বা হঠাৎ কমে যাওয়া
❌ মস্তিষ্কের বিকাশ থেমে যাওয়া
❌ একাধিক শারীরিক জটিলতা
👉 আর সবচেয়ে বড় বিষয় হলো — এই অভ্যাস যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে শিশুর মধ্যে একটা খাবারের প্রতি ভয় বা ঘৃণা তৈরি হয়, যেটা তাকে আজীবন সমস্যায় ফেলতে পারে।
তাই আজকের এই লেখাটি শুধুই তথ্য নয় — এটা আপনার সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য একটি সতর্কতা ও করণীয়র গাইডলাইন।
এই আর্টিকেলে আপনি জানবেন—
✅ শিশু ঠিক মতো খাচ্ছে না?খাওয়ায় অনীহার ৫টি গোপন ও গুরুত্বপূর্ণ কারণ
✅ প্রতিটি সমস্যার জন্য কার্যকর ও সহজ সমাধান
✅ কখন ডাক্তার দেখানো জরুরি
✅ কীভাবে শিশুকে খাওয়ার প্রতি আগ্রহী করে তুলবেন
শিশু ঠিক মতো খাচ্ছে না? চলুন, শিশুর না খাওয়ার পেছনের সত্যিটা আজ জানাই—
কারণ আপনি যদি এখন না বোঝেন, তাহলে হয়তো আগামীকাল অনেক দেরি হয়ে যাবে! আর দেরি না করে এই আর্টিকেলটি পড়ে ফেলুন।
🔎শিশু ঠিক মতো খাচ্ছে না? (৫টি প্রধান কারণ ও লক্ষণ)
১. ❌🥄 ক্ষুধা না লাগা বা অ্যানোরেক্সিয়া: শিশুর না খাওয়ার সবচেয়ে বিপজ্জনক কারণ!
শিশু ঠিক মতো খাচ্ছে না? সারাদিনে মাত্র ২–৩ চামচ খাবার খায়? দুধ ছাড়া আর কিছুতেই তার মন বসে না? খাওয়ার প্লেট সামনে রাখলে কি সে বিরক্তি অনুভব করে?
এই লক্ষণগুলোকে অবহেলা করলে আপনি নিজের অজান্তেই শিশুকে ঠেলে দিচ্ছেন এক ভয়ঙ্কর রোগের দিকে— যার নাম “শিশু অ্যানোরেক্সিয়া” বা ক্ষুধা হারিয়ে ফেলা।
🧠 কী এই অ্যানোরেক্সিয়া?
অ্যানোরেক্সিয়া বা ক্ষুধা না লাগা বলতে এমন একটি অবস্থা বোঝায়, যখন শিশুর শরীর ও মস্তিষ্ক খাবারের প্রতি স্বাভাবিক চাহিদা হারিয়ে ফেলে।শিশু ঠিক মতো খাচ্ছে নাIতার খিদে পায় না, খেতে চায় না, এবং খাওয়ার সময় বিরক্ত বা ভয় পায়।

⚠️ এটা কেন ভয়ংকর?
শিশুর বয়সে পুষ্টি ও সঠিক খাবার গ্রহণ না হলে তার:
- 📉 ওজন বাড়ে না বা হঠাৎ কমে যেতে পারে
- 🧠 মস্তিষ্কের বিকাশে বাধা পড়ে
- 🦴 হাড় দুর্বল হয়ে যায়
- 💔 রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একদম নেমে যায়
- 😞 শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যেও পড়ে নেতিবাচক প্রভাব
🔍 কী কী লক্ষণে বুঝবেন শিশুর অ্যানোরেক্সিয়া হতে পারে?
- দিনে ২ বারের বেশি খাবার এড়িয়ে চলে
- খাবারের সময় কান্নাকাটি বা জেদ
- পছন্দের খাবারেও উৎসাহ নেই
- খেলাধুলায় আগ্রহ নেই, সারাদিন ক্লান্ত
- শরীরের ওজন অনুযায়ী খাওয়ার পরিমাণ কম
- মুখে খাবার নিয়ে চিবায়, কিন্তু গিলে না
- মাঝেমাঝে বমি করার চেষ্টা করে খাওয়ার পর
🎯 শিশু ঠিক মতো খাচ্ছে না? ৫টি গোপন কারণ যা আপনার অজান্তেই ক্ষতি ডেকে আনছে!” কী কী কারণে শিশুর ক্ষুধা কমে যেতে পারে?
🔹 দীর্ঘদিনের কোষ্ঠকাঠিন্য
🔹 পরিপাকতন্ত্রে কৃমি (Worm Infection)
🔹 নিয়মহীন ঘুম ও খেলার রুটিন
🔹 মানসিক চাপ বা স্কুলে ভয়
🔹 অতিরিক্ত চিপস, চকোলেট, বা প্যাকেটজাত খাবার
🔹 জ্বর বা ঠান্ডা-কাশির পরবর্তী দুর্বলতা
✅ বাস্তবসম্মত সমাধান: কীভাবে ফিরিয়ে আনবেন শিশুর ক্ষুধা?
- নিয়মিত রুটিন: প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে খাবার দিন
- ছোট পরিমাণ: কম কম খাবার দিন, তবেই আগ্রহ তৈরি হবে
- রঙিন ও আকর্ষণীয় খাবার: ছোটদের থালায় রঙিন সবজি, হাসিমুখ রুটি বা ফল দিয়ে সাজান
- জল খাওয়ার অভ্যাস: খাবারের আগে ২০-৩০ মিনিট আগে অল্প গরম জল খেতে দিন – এটা হজমে সহায়ক
- অল্প খেলাধুলা: খেলাধুলা ক্ষুধা বাড়ায়
- স্ক্রিন টাইম কমান: খাবার সময় মোবাইল/টিভি একদম বন্ধ
- ঘরোয়া ঘাটতি পূরণ: যেমন—
- 🍊 ভিটামিন C: কমলালেবু, আমলকি
- 🥚 প্রোটিন: ডিম, দুধ
- 🌿 আয়রন: কিশমিশ, পালং শাক
- হালকা হজমজাত খাবার যেমন খিচুড়ি, সবজি সুপ দিন
🩺 কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?
- শিশু এক সপ্তাহের বেশি কিছু না খেলে
- ওজন অস্বাভাবিকভাবে কমে গেলে
- শরীরে দুর্বলতা, চোখে কালি, বা পেটে ব্যথা থাকলে
- খাবার দেখলেই বমির ভাব বা মানসিক ভীতি তৈরি হলে
২. 🦷 দাঁতের ব্যথা বা মুখের অস্বস্তি: শিশু ঠিক মতো খাচ্ছে না? শিশুর না খাওয়ার পিছনের এক নীরব শত্রু!
আপনার বাচ্চাটি কি খাওয়ার প্লেট দেখে আগ্রহ দেখালেও মুখে তোলার পর খাবার ফেলে দেয়?শিশু ঠিক মতো খাচ্ছে না? কিংবা মুখের একপাশ দিয়ে চিবাতে চেষ্টা করে?
বাচ্চা কথা না বললেও শরীর তার সংকেত দেয় — আর অনেক সময় সেই সংকেত আসে মুখের ভিতর থেকে!
✅ দাঁতের ব্যথা বা মুখের অস্বস্তি হতে পারে শিশুর খাওয়া না চাওয়ার অন্যতম গোপন কারণ, যা অনেক মা-বাবা শুরুতে বুঝতেই পারেন না।
👶 দাঁতের ব্যথা শিশুদের মধ্যে খুবই সাধারণ — কিন্তু অবহেলা করলে বিপদ!
শিশুরা সাধারণত ৬ মাস থেকে ৩ বছর বয়সের মধ্যে দাঁত গজাতে শুরু করে। এই সময় দাঁতের মাড়িতে ব্যথা, চুলকানি, ফোলাভাব ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। আবার বড়দের মতো শিশুরাও দাঁতের ক্যাভিটি, মাড়ির ইনফেকশন, জিহ্বায় ঘা কিংবা মুখের ভিতরে ছোট ফোঁড়া বা ছাল উঠে যাওয়ার সমস্যায় ভোগেI শিশু ঠিক মতো খাচ্ছে না? utsaho.com

🔍শিশু ঠিক মতো খাচ্ছে না? কীভাবে বুঝবেন দাঁতের ব্যথা শিশুর খাওয়ায় বাধা দিচ্ছে?
- খাবার মুখে নিয়ে চিবাতে না পারা
- মুখে খাবার নিয়ে চুপ করে থাকা
- খাবার গিলে না ফেলে দেয়
- দাঁত বা গাল কামড়ে ধরা
- ঠান্ডা বা গরম খাবার খেতে না চাওয়া
- লালা পড়া বেড়ে যাওয়া
- রাতে ঘুমের মধ্যে কান্না বা অস্থিরতা
⚠️ দাঁতের সমস্যাকে অবহেলা করলে কী হতে পারে?
- খাওয়ার প্রতি ভয় বা বিরক্তি তৈরি হয়
- দীর্ঘমেয়াদে অপুষ্টি
- মুখের ভেতর ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়ে
- জিহ্বার স্বাদগ্রাহী কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়
- বাচ্চা খাবার চিবাতে না শেখে, গিলতে শেখে না
✅ শিশু ঠিক মতো খাচ্ছে না? ৫টি গোপন কারণ যা আপনার অজান্তেই ক্ষতি ডেকে আনছে! সমস্যার সমাধানে যা করতে হবে:
🪥 মুখের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন
- শিশুদের জন্য উপযুক্ত নরম ব্রাশ ও ফ্লুরাইডমুক্ত পেস্ট ব্যবহার করুন
- দিনে ২ বার ব্রাশ করার অভ্যাস গড়ে তুলুন
- ১ বছর বয়স থেকেই দাঁতের যত্ন শুরু করুন
❄️ ব্যথা উপশমে প্রাকৃতিক উপায়
- ঠান্ডা চামচ বা আঙুলে ঠান্ডা কাপড় পেঁচিয়ে হালকা চেপে মাড়িতে দিন
- এক চামচ নারকেল তেল হালকা গরম করে মাড়িতে লাগান
- অ্যালোভেরা জেল (শিশুর জন্য নিরাপদ হলে) ঘা-তে লাগাতে পারেন
🍲 খাবার নির্বাচনে সতর্কতা
- শক্ত বা গরম খাবার এড়িয়ে চলুন
- নরম, ঠান্ডা বা হালকা গরম খাবার দিন – যেমন কলা, ওটস, সুজি, দুধচিঁড়ে
- গিলতে সহজ এমন খাবার বেছে নিন
👩⚕️ ডেন্টাল চেকআপ জরুরি
- বছরে অন্তত একবার শিশুর দাঁতের রুটিন চেকআপ করান
- মাড়ি ফুলে গেলে, রক্ত পড়লে বা দাঁত কাঁপলে দেরি না করে ডেন্টিস্ট দেখান
- অ্যান্টিসেপটিক মাউথওয়াশ (ডাক্তারের পরামর্শে) ব্যবহার করা যেতে পারে বড় বাচ্চাদের জন্য
🎯 মা-বাবার করণীয়:
- শিশুর মুখ দেখলেই বোঝার চেষ্টা করুন কোনো অস্বস্তি হচ্ছে কিনা
- জোর করে খাওয়াতে যাবেন না, এতে ব্যথা বাড়ে
- খাওয়ার সময় শিশুর পাশে থাকুন, উৎসাহ দিন
- নিজেও মুখ পরিষ্কার করে শিশুকে শেখান — অভ্যাস গড়ে তুলুন
🧡 বিশেষ টিপ:
“জিভ বা মাড়িতে ঘা থাকলে শিশুর খাবার পছন্দ বদলে যেতে পারে।শিশু ঠিক মতো খাচ্ছে না? সে ঝাল, নোনতা বা গরম খাবার একেবারেই খেতে চাইবে না।
এটি ভুলভাল খাওয়ার জন্য নয় — বরং ব্যথা থেকে বাঁচার একটি প্রতিক্রিয়া। তাই ধৈর্য ধরে খুঁজে বের করুন, সমস্যাটা কোথায় ?শিশুর খাওয়ার অভ্যাস হঠাৎ করে বদলে গেলে, শিশু ঠিক মতো খাচ্ছে না?সেটিকে অবহেলা করবেন না। অনেক সময় শিশুর মুখের ভিতরে এমন কিছু অস্বস্তি লুকিয়ে থাকে, যেটা ভাষায় প্রকাশ করতে না পারলেও আচরণে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আপনিই পারেন, আপনার শিশুকে ব্যথামুক্ত করে আবার খাওয়ার আনন্দে ফিরিয়ে আনতে
৩. 📱 অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম ও মনোযোগের অভাব: শিশুর খাওয়া না চাওয়ার অদৃশ্য ‘ডিজিটাল জ্বর’!
“খাওয়ার সময় টিভি না দিলে খায় না…”
“মোবাইলে কার্টুন চালিয়ে খাওয়াতে হয়…”
“স্ক্রিন বন্ধ করলেই বাচ্চা খাবার ফেলে দিয়ে কেঁদে ওঠে…”
শিশু ঠিক মতো খাচ্ছে না? সমস্যাগুলো আজকাল ঘরে ঘরে দেখা যাচ্ছে, এবং আমরা অনেকেই এটিকে “নতুন যুগের অভ্যাস” ভেবে স্বাভাবিক ভাবছি। কিন্তু আপনি জানেন কি, আপনার সন্তান যদি খাওয়ার সময় মোবাইল বা টিভির স্ক্রিনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, তবে তা তার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য দুটোর জন্যই এক ভয়ঙ্কর বিপদ!utsahohealthcare.com

🧠শিশু ঠিক মতো খাচ্ছে না? স্ক্রিন টাইম খাওয়া কমিয়ে দেয় কীভাবে?
- মনোযোগ নষ্ট করে:
খাবার সামনে থাকলেও মন থাকে স্ক্রিনে, ফলে সে বুঝতেই পারে না সে কতটুকু খাচ্ছে বা আদৌ খাচ্ছে কিনা। - স্নায়ুবিক বিভ্রান্তি তৈরি করে:
খাবারের স্বাদ, গন্ধ, গঠন—এসব অনুভবের সময় যখন চোখ ও কান ব্যস্ত থাকে কার্টুনে, তখন মস্তিষ্কে খাওয়ার প্রতি আগ্রহ কমে যায়। - হজমের প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়:
মনোযোগ ছাড়াই খাওয়া হলে হজমে সাহায্যকারী উৎসেচনগুলো ঠিকভাবে নিঃসরণ হয় না।
🔍 লক্ষণগুলো যেগুলো স্ক্রিন-নির্ভর খাওয়ার কারণে দেখা দেয়:
- খাবার ছাড়া স্ক্রিন দিলেও শান্ত হয়ে যায়
- খেতে বসে চুপচাপ ঘন্টার পর ঘণ্টা ভিডিও দেখে
- খাওয়ার সময় চোখে-মুখে বিরক্তির ভাব
- প্রতিদিন খাওয়ার সময় বেশি লাগে (৩০ মিনিটের বেশি)
- মায়ের মুখের দিকে না তাকিয়ে কেবল স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে খায়
⚠️ দীর্ঘমেয়াদে কী ক্ষতি হতে পারে?
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়
- হজমজনিত সমস্যা – গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটে ব্যথা
- চোখের সমস্যা – চোখের পানি পড়া, জ্বালাপোড়া, দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হওয়া
- মস্তিষ্কে মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি হ্রাস
- নিয়মহীন খাওয়া ও ঘুমের রুটিন
- অতিরিক্ত ওজন (obesity) বা ওজন না বাড়া – দুটোই হতে পারে
✅ করণীয় সমাধান:
✋ স্ক্রিন একদম বন্ধ রাখুন খাওয়ার সময়:
- খাওয়ার সময় টিভি, মোবাইল একদম বন্ধ করুন
- অন্য সব কাজও বন্ধ রেখে পরিবারের সবাই একসাথে খেতে বসুন
🎨 খাওয়াকে রঙিন ও মজার করে তুলুন:
- হাসিমুখ রুটি, কার্টুন চরিত্রের মতো ফল কেটে দিন
- খেলনার থালা, চামচ ব্যবহার করুন
- গল্প বলে বা গানের মাধ্যমে খাওয়ান – স্ক্রিন নয়, মুখোমুখি গল্প হোক
🕒 নির্দিষ্ট স্ক্রিন টাইম রুটিন তৈরি করুন:
- দিনে সর্বোচ্চ ৩০-৪০ মিনিট স্ক্রিন, তাও ভেঙে ভেঙে
- খাওয়ার আগে ৩০ মিনিট ও পরে ১ ঘণ্টা স্ক্রিন একদম নিষেধ
- শিশুর সামনে নিজেও মোবাইল ব্যবহার কমান – শিশুরা দেখে শেখে
🤗 শিশুর সঙ্গে চোখে চোখ রেখে কথা বলুন:
- খাওয়ার সময় তার সঙ্গে হাসুন, কথা বলুন, প্রশ্ন করুন
- এতে খাবারের প্রতি মনোযোগ বাড়ে ও সামাজিক সম্পর্ক উন্নত হয়
🧡 মায়েদের জন্য বিশেষ টিপস:
✅ শুরুতে শিশু বিরক্ত করবে, কান্নাকাটি করবে – তবু ধৈর্য ধরে নিয়মে ফিরিয়ে আনুন
✅ ধাপে ধাপে স্ক্রিন ছাড়ানোর রুটিন বানান, একদিনে বন্ধ করা সম্ভব নয়
✅ শিশুকে রোজ একবার রান্নাঘরে নিয়ে যান – খাবারের প্রতি কৌতূহল তৈরি হবে
✅ নিজের ফোন একঘণ্টার জন্য দূরে রেখে শিশুকে জানান – “তোমার সঙ্গে সময় কাটানোই আমার পছন্দ!”
৪. 🤒 শিশুর অসুস্থতা বা শরীর খারাপ থাকলে ক্ষুধা চলে যায় – নীরবভাবে শিশুকে দুর্বল করে দিচ্ছেI
🧠 শিশুর শরীর খারাপ মানেই কেন ক্ষুধা চলে যায়?শিশু ঠিক মতো খাচ্ছে না?
- জ্বর, ঠান্ডা, ইনফেকশন ইত্যাদি হলে শরীরের শক্তি ক্ষয় হয়, ফলে মস্তিষ্ক খাবার গ্রহণের চাহিদা কমিয়ে দেয়
- কানের ব্যথা, গলা ব্যথা, দাঁতের সংক্রমণ ইত্যাদি খাওয়ার সময় অস্বস্তি তৈরি করে
- পেট খারাপ বা কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে শিশুর পেটে চাপ অনুভূত হয় – ফলে ক্ষুধা মরে যায়
- ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা – পানির অভাবেও ক্ষুধা লোপ পায়
- ভাইরাল ফিভার বা গোপন সংক্রমণ – দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি ও ক্ষুধাহীনতা তৈরি করে
🔍 লক্ষণ: কীভাবে বুঝবেন শিশুর শরীর খারাপ?
- খাওয়ার পাশাপাশি ঘুম কমে গেছে বা বেড়ে গেছে
- শরীর গরম বা শরীর ঠান্ডা, চেহারায় উজ্জ্বলতা কম
- খেলাধুলায় আগ্রহ কম, বেশি সময় চুপচাপ থাকে
- মুখে ক্ষত, গলা ব্যথা বা কাশি
- বমিভাব, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য
- চোখে কালি পড়া বা হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া
⚠️ বিপদ কী হতে পারে?
- ৩ দিনের বেশি খাবার না খেলে ওজন দ্রুত কমে যেতে পারে
- শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হঠাৎ নেমে যেতে পারে
- প্রয়োজনীয় ভিটামিন, আয়রন, ক্যালসিয়ামের ঘাটতি তৈরি হয়
- শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়
- দীর্ঘস্থায়ী খাওয়া অনীহা মানসিক ‘অ্যাভারশন টু ফুড’ তৈরি করতে পারে
✅শিশু ঠিক মতো খাচ্ছে না? সমাধান কী?

👩⚕️ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
- শিশুর যদি ২৪ ঘণ্টার বেশি খিদে না থাকে, তা হলে দ্রুত শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ দেখানI খাওয়ার পরামর্শ নিন পেডিয়াট্রিশিয়ান এর কাছ থেকে
- জ্বর, কাশি, পেটব্যথা, ইনফেকশন ইত্যাদি পরীক্ষা করান
🥣 হালকা ও হজমে সহজ খাবার দিন
- সুজি, খিচুড়ি, দুধচিঁড়ে, ভাপা সবজি
- কলা, আপেল, দই — হালকা কিন্তু পুষ্টিকর
- ছোট ছোট পরিমাণে খাওয়ান, দিনে ৫–৬ বার
💧 পর্যাপ্ত জল ও তরল খাবার দিন
- ডাবের জল, লেবুপানি, স্যুপ, গরম জল
- শরীরে পানিশূন্যতা দূর হলে ক্ষুধা ধীরে ধীরে ফিরে আসে
❤️ যত্ন ও ভালোবাসা দিন
- বকাঝকা না করে শিশুর মন বোঝার চেষ্টা করুন
- খেতে না চাইলে জোর না করে গল্প, গান বা স্পর্শের মাধ্যমে সান্ত্বনা দিন
- আপনিও শিশুর পাশে বসে খান, ওর খাওয়ায় আগ্রহ বাড়বে
🧡 বিশেষ টিপস:
✅ শিশুর রোগমুক্তির পরেও কিছুদিন ক্ষুধা ফিরতে সময় লাগে – তাড়াহুড়ো করবেন না
✅ ওষুধ চলাকালীন অনেক সময় ক্ষুধা মরে যায় – ডাক্তারের পরামর্শে খাবার পরিমাণ ঠিক রাখুন
✅ শিশুর শরীরী ভাষা ও চোখের চাহনি দেখে বোঝার চেষ্টা করুন – ও কী চাইছে?
৫. 🧠 মানসিক চাপ বা ভয়
শিশু ঠিক মতো খাচ্ছে না?শিশুরা হয়তো অজান্তেই কোনও মানসিক অস্বস্তিতে ভুগছে – স্কুলে বকুনি, পরিবারে ঝগড়া, নতুন পরিবেশ ইত্যাদি কারণে।
🔍 লক্ষণ:
- মনমরা থাকে
- কারও সাথে খেলতে চায় না
- ঘুমে বিঘ্ন ঘটে
✅ শিশু ঠিক মতো খাচ্ছে না? সমাধান:
- শিশুকে আদর ও ভালোবাসা দিন
- ওর সাথে কথা বলুন, অনুভূতির কথা শুনুন
- খেলনা বা গল্প দিয়ে খাওয়ার পরিবেশ আনন্দময় করে তুলুন
🍓 শিশুর খাওয়ায় উৎসাহ দিতে যা করবেন
✅ ছোট ছোট পরিমাণে দিন – বেশি দিলে ভয় পায়
✅ খাবার রঙিন ও আকর্ষণীয় করুন
✅ একসাথে পরিবারের সবাই বসে খাওয়ার অভ্যাস গড়ুন
✅ ঘুম ও খেলার রুটিন ঠিক রাখলে ক্ষুধা স্বাভাবিক হয়
⚠️ কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?
👉 ৩ দিনের বেশি কিছু না খেলে
👉 ওজন কমতে থাকলে
👉 বারবার বমি বা পাতলা পায়খানা হলে
👉 দুর্বলতা বা শরীরে চুলকানি দেখা দিলে
শিশু ঠিক মতো খাচ্ছে না? শিশু না খাওয়া মানেই সে অবাধ্য নয়। এর পেছনে থাকতে পারে গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যগত ও মানসিক কারণ। ধৈর্য ও ভালোবাসা দিয়ে, এবং কিছু সহজ উপায় মেনে চললেই সমস্যার সমাধান সম্ভব।