একজন মায়ের ফোকাস নেই? সন্তানের ভবিষ্যৎ তাহলে ধোঁয়াশায়।

একজন মায়ের ফোকাস নেই? সন্তানের ভবিষ্যৎ তাহলে ধোঁয়াশায়।

একজন মায়ের ফোকাস নেই? সন্তানের ভবিষ্যৎ তাহলে ধোঁয়াশায়।

একজন মা শুধু সন্তানের জন্মদাত্রীই নন, তিনিই সন্তানের ভবিষ্যৎ গঠনের প্রথম ও প্রধান ভিত। কিন্তু বর্তমান সমাজব্যবস্থা, ব্যস্ত জীবনধারা, প্রযুক্তির প্রভাব এবং মানসিক চাপের কারণে অনেক মা-ই নিজেদের ফোকাস হারিয়ে ফেলছেন। এই ফোকাসের অভাব শুধু মায়ের জীবনেই নয়, সন্তানের মানসিক, সামাজিক ও ভবিষ্যৎ বিকাশেও গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।

এই লেখায় আমরা জানব—ফোকাসহীন মায়ের প্রভাব কীভাবে সন্তানের ভবিষ্যৎকে বিপন্ন করে, কীভাবে একজন মা নিজের ফোকাস ফিরে পেতে পারেন এবং কেন নিজের যত্ন নেওয়া সন্তানের যত্নেরই একটা অংশ।

সন্তানের ভবিষ্যৎ আপনার ফোকাসের উপর নির্ভরশীল

একটি শিশু তার জীবনের শুরুতে যাদের সবচেয়ে বেশি অনুসরণ করে, তাদের একজন হলো মা। মায়ের মুখের অভিব্যক্তি, কাজের ধরন, আচরণ—সবই শিশুর মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে। যদি একজন মা নিজেই বিভ্রান্ত হন, মানসিকভাবে ক্লান্ত থাকেন এবং সন্তানের প্রতি মনোযোগহীন থাকেন, তবে সেই সন্তান কীভাবে আত্মবিশ্বাসী ও লক্ষ্যনির্ভর হয়ে গড়ে উঠবে?

মনোবিদরা বলেন, শিশুর আত্মনির্ভরশীলতা ও আত্মবিশ্বাসের বীজ প্রথমত বোনা হয় মায়ের স্নেহ ও মনোযোগে।
৩টি কারণে ফোকাসহীন মা সন্তানের অগ্রগতিতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়

১. রুটিনের অভাব:
ফোকাসহীন মা অনেক সময়েই সন্তানের জন্য একটি নির্দিষ্ট রুটিন তৈরি করতে পারেন না। ফলে বাচ্চা শৃঙ্খলা ও সময় ব্যবস্থার গুরুত্ব শেখে না।

২. নেতৃত্বহীনতা:
সন্তান যখন সিদ্ধান্ত নিতে চায়, তখন তাকে গাইড করার মতো নেতৃত্ব মায়ের ভিতর থাকে না যদি তিনি মানসিকভাবে অপ্রস্তুত থাকেন।

৩. সংবেদনশীলতার ঘাটতি:
বিভ্রান্ত ও মানসিকভাবে চাপে থাকা মা সন্তানের আবেগ বুঝতে পারেন না। এতে শিশু হয়তো অবহেলিত বা ভুলভাবে গাইডেড হয়।
আপনি নিজেই আপনার সন্তানের সবচেয়ে বড় শিক্ষক

বাচ্চারা কথা শোনার চেয়ে বেশি শেখে দেখে। একজন মা যদি নিজের জীবন লক্ষ্যনির্ভরভাবে পরিচালনা করেন, তার প্রতিটি কাজের পেছনে উদ্দেশ্য থাকে, তবে সন্তান তা দেখেই অনুপ্রাণিত হয়।

আপনি যদি প্রতিদিন সকালে ১০ মিনিট নিজের জন্য সময় নিয়ে লক্ষ্য নির্ধারণ করেন, সেই অভ্যাস আপনার সন্তানও আয়ত্ত করতে শুরু করবে।

কীভাবে ফিরিয়ে আনবেন নিজের ফোকাস?

১. ‘মাইন্ডফুল ব্রেক’ নিন প্রতিদিন:

প্রতিদিন অন্তত ১৫ মিনিট নিজের সঙ্গে সময় কাটান। চুপচাপ বসে নিজের ভাবনা শুনুন। এটা আপনার চিন্তার জগতে পরিষ্কারতা আনবে।

২. প্রযুক্তি থেকে কিছুটা দূরে থাকুন:

সন্তানের সঙ্গে সময় কাটানোর সময় ফোন, টিভি বন্ধ রাখুন। শুধুমাত্র চোখে চোখ রেখে কথা বললেই আপনি বুঝতে পারবেন সন্তানের ভেতরে কী চলছে।

৩. ক্ষুদ্র লক্ষ্য স্থির করুন:

“আজ আমি শুধু ওর হোমওয়ার্কে সময় দেব”—এমন ছোট ছোট লক্ষ্য রাখলে তা সহজেই পূরণ করা যায় এবং ফোকাস তৈরি হয়।

৪. নিজেকে ক্ষমা করুন:

আপনি মানুষ, ভুল হতেই পারে। তবে সেই ভুল নিয়ে পড়ে থাকলে চলবে না। নিজেকে ক্ষমা করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।

প্রশ্ন করুন নিজেকে: আমি কি সন্তানের জীবনের রোল মডেল হতে পারছি?

আমি কীভাবে আমার সময় কাটাচ্ছি?

আমি কি আমার সন্তানের সাথে মনোযোগ দিয়ে সময় কাটাচ্ছি?

আমি কি ওর আবেগ ও চিন্তাগুলো বুঝতে পারছি?

এই প্রশ্নগুলোর উত্তরই আপনাকে দেখিয়ে দেবে, আপনার ফোকাস ঠিক আছে কিনা।

এই একটি ভুল অনেক মা-ই করেন: নিজেদের যত্নকে অবহেলা করা

আমরা প্রায়ই শুনি—“আমি সময় পাই না”, “আমার এখন নিজের কথা ভাবার সময় না” ইত্যাদি। কিন্তু আপনি যদি নিজের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য ঠিক না রাখেন, তাহলে কীভাবে সন্তানের জন্য ভালো সিদ্ধান্ত নেবেন?

একটি উদাহরণ:
একটি বিমানে অক্সিজেন মাস্ক পড়ানোর সময় বলা হয়—“প্রথমে আপনি নিজে মাস্ক পরুন, তারপর বাচ্চাকে সাহায্য করুন।”
কারণ, আপনি সচেতন না থাকলে সন্তানকেও রক্ষা করতে পারবেন না।

কিন্তু আপনি আছেন, এটাই সন্তানের সবচেয়ে বড় আশ্রয়।

সময় দ্রুত চলে যাচ্ছে। সন্তান প্রতিদিন একটু একটু করে বড় হয়ে যাচ্ছে। তার মানসিক গঠন, নীতিবোধ, আত্মবিশ্বাস সবই এখন তৈরি হচ্ছে।
এখনই সময়—আপনার নিজের ফোকাস ফিরিয়ে আনার।

একটি সহজ অভ্যাস যা বদলে দিতে পারে সবকিছু ।

আজই একটি ডায়েরি নিন।
প্রতিদিন লিখুন:
“আজ আমি সন্তানের জন্য কী করলাম মন থেকে?”

এই ছোট্ট অভ্যাস আপনাকে রিমাইন্ড করবে, আপনি কতটা সচেতনভাবে মা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

উপসংহার: মা যদি স্থির হন, সন্তানের ভবিষ্যৎ হয় উজ্জ্বল

একজন মায়ের ফোকাস শুধু তার সন্তানের পড়াশোনা নয়, তার জীবনের প্রতিটি স্তম্ভ—আত্মবিশ্বাস, স্বপ্ন দেখা, আত্মনির্ভরতা এবং ভালোবাসার উৎস।
এই লেখার মাধ্যমে আমরা আশা করি, আপনি নিজের ভেতরের মা-টিকে একটু ভালো করে দেখবেন, বুঝবেন এবং ভালোবাসবেন।

আপনি শক্তিশালী, আপনি প্রভাবশালী—আপনার ফোকাসেই গড়া হয় আগামী প্রজন্ম।

আপনার অনুভব শেয়ার করুন নিচে কমেন্টে—আপনি কীভাবে নিজের ফোকাস ধরে রাখেন, সন্তানকে সময় দেন? আপনার অভিজ্ঞতা অন্য মায়েদের সাহায্য করতে পারে।